কলকাতা, 4th February, 2025: উইলিয়াম শেকসপিয়র বলেছিলেন,” এই পুরো বিশ্ব একটি নাট্যমঞ্চ, নারী ও পুরুষ স্রেফ অভিনয় করে যাচ্ছে সেখানে”। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল (মনিপাল হসপিটাল গ্রুপের একটি অংশ) একদম অন্য ভাবে পালন করল বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। মেডিকা সকল ক্যান্সারজয়ীদের সুযোগ দিল নিজেদের জীবনের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরার জন্য – নিজের লড়াইকে সামনের এগিয়ে নিয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে দেখানো।
আজ অর্থাৎ বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল আয়োজন করেছিল ক্যান্সার সারভাইভার মিট, যেখানে উপস্থিত ছিলেন চন্দন সেন, খ্যাতনামা নাট্য অভিনেতা, প্রফেসর (ডঃ) সুবীর গাঙ্গুলি, সিনিয়র কনসালটেন্ট, এডভাইজার, রেডিয়েশন অনকোলজি; ডঃ সৌরভ দত্ত, ডিরেক্টর, মেডিকা অনকোলজি এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট, হেড এবং নেক অঙ্কো সার্জারি; ডঃ অভয় কুমার, সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং বিভাগীয় প্রধান (ইউরোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, রোবটিক সার্জারি), ডঃ অরুণাভ রায়, সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং বিভাগীয় প্রধান, গাইনিকোলজিক অনকোলজি এবং রোবটিক সার্জারি।
প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে একসাথে করতালি হয় যখন ক্যানসারজয়ীরা, তাদের পরিবার ও ডাক্তাররা একসাথে এসে লড়াই, আশা ও শক্তির কথা তুলে ধরেন। কোন ক্যানসারজয়ী, অভিনয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছে রয়েছে, তারা যোগদান করতে পারেন ওয়ার্কশপের মধ্যে, যার নেতৃত্বে থাকবেন খ্যাতনামা নাট্যকার চন্দন সেন। এই যোদ্ধারা মঞ্চের মধ্যে তাদের লড়াইকে পারফর্ম করবেন। বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে ক্যান্সারজয়ীরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকবে না, তার সাথে লাইট, স্টেজ, অ্যাকশন এর মধ্যে জ্বলজ্বল করবেন।
ক্যান্সারের প্রভাব খুব গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদি। তবুও অন্ধকার সময়ে , মানুষ আলোর পথে সুস্থ হওয়ার পথ খুঁজে নেয়। বেঁচে থাকার লড়াইতে শুধু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, এছাড়া ইমোশনাল এবং সাইকোলজিক্যাল বাধা পেরিয়ে এগানো। বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০২৫ ‘ইউনাইটেড বাই ইউনিক’ ক্যাম্পেনের প্রথম ধাপ অনুসারে ক্যান্সার কেয়ারের ক্ষেত্রে মানুষ ভিত্তিক পদক্ষেপ এটি। বলাই বাহুল্য, এটি অনেকটাই পরিবর্তন কিভাবে স্বাস্থ্য এবং ক্যান্সার সার্ভিসের সব ডিজাইন এবং ডেলিভারি হয় – যেভাবে মানুষ, পরিবার, কমিউনিটি কিভাবে হেলথ সিস্টেম এর মধ্যে থাকে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এর তথ্য অনুসারে এই বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে সারা ভারতে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ১৫.৭ লাখ পৌঁছবে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪.৬ লাখ। সারা বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ মিলিয়ন হবে ২০৫০ সালে। একটি কমিউনিটি তৈরি করার আশু প্রয়োজন যেখানে ক্যান্সারে বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষেরা একে অন্যের অভিজ্ঞতা শুনে অনুপ্রাণিত হবেন। এই বিশ্ব ক্যান্সার দিবস মেডিকা চায় এরকম একটি সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করতে।
প্রফেসর (ডঃ) সুবীর গাঙ্গুলি, সিনিয়র কনসালটেন্ট, পরামর্শদাতা, রেডিয়েশন অনকোলজি, বলেন,” এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য হল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে যে গ্যাপ রয়েছে, সেটি কমিয়ে আমার ক্ষেত্রে মেডিকা অনকোলজি টিম একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা জানি যে ক্যান্সারের গভীরতা এবং ক্ষতি করার দিকটি অনেক বেশি কারণ অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে এবং সচেতনতা কম ও সামাজিক ভাবনা পিছিয়ে পড়া অনেকটা দায়ী। আমরা বিশ্বাস করি যে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কোন সীমানা নেই আর আমাদের লক্ষ্য হল যে গুণগতমান সহ চিকিৎসা পরিষেবা সমস্ত দিকে পৌঁছে দেওয়া।”
ডঃ সৌরভ দত্ত, ডিরেক্টর, মেডিকা অনকোলজি এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট, হেড এবং নেক অনকোসার্জারি, বলেন,” আমাদের লক্ষ্য শুধু চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া নয়, মানুষকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। এমন একটা জায়গায়, যেখানে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, জীবনের প্রতিটি দিক যেন উপভোগ করতে পারেন আর এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই কারণেই আমরা একটি ড্রামা ওয়ার্কশপ আয়োজন করার কথা ভেবেছি, যেখানে শুধুমাত্র যারা

ক্যানসারকে পরাস্ত করেছেন তারা যোগদান করতে পারবেন। এটি শুধুমাত্র তাদের মনোবল বাড়াবে নয়, তার সাথে সমস্ত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইতে থাকা মানুষেরা ইতিবাচক বার্তা পাবেন যে ক্যান্সার জীবনের কিছুই আটকাতে পারেনি।”
বৈশালী মুখার্জি, একজন ওভারিয়ান ক্যানসার সারভাইভার, বললেন, “পাঁচ বছর আগে, আমার ওভারিয়ান ক্যানসার ধরা পড়ে—একটি মুহূর্ত যা আমার জীবন পুরোপুরি ওলটপালট করে দিয়েছিল। আমি কখনো ভাবিনি যে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব। চিকিৎসার পথ ছিল কঠিন, কিন্তু আজ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, বিবাহিত এবং একটি সুন্দর সন্তানের মা। আজ, মেডিকায় আমার প্রথম কর্মদিবস সম্পন্ন করার মাধ্যমে, যেখানে আমার সুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়েছিল, জীবন যেন এক পূর্ণ বৃত্ত সম্পন্ন করল। আমি এই সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ এবং আশা করি, আমার গল্প অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে কখনো হাল না ছাড়তে।”
এই অনুষ্ঠানে, দীপঙ্কর সাহা, কিডনি ক্যান্সারের রোগী তার জীবন কাহিনী বলতে গিয়ে জানান,”আমার কিডনির ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। আমার রেডিক্যাল নেফ্রেক্টমী হয় (এই পদ্ধতিতে পুরো কিডনি এবং তার টিস্যু বাদ দেওয়া হয়) এবং বর্তমানে আমি বিপদ থেকে মুক্ত। এটা ঠিক যে ক্যান্সারের জন্য শরীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাদ গিয়েছে, কিন্তু আমার লড়াই করার ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পারেনি। আজকে আমি আগের চেয়ে অনেক ভালো রয়েছি এবং সুস্থ জীবনযাপন করছি। আমি মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের সমস্ত ডাক্তার ও কেয়ারগিভারের কাছে খুব কৃতজ্ঞ।”
শিবনাথ দত্ত, প্রোস্টেট ক্যান্সারের রোগী, বলেন,” আমি কেন্দ্রীয় সরকারের হেলথ স্কিমের কর্মচারী। ভেবেছিলাম অবসরের পর জীবন শান্তিতে কাটাব। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই আমার সহজ নয়। এখন হরমোন থেরাপি চলছে আমার, রোগ এখন অনেকটাই কব্জায় রয়েছে। পরিবারের সাথে আমি এখন জীবনের প্রতিটি দিন উপভোগ করছি।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হরিনাভিতে বসবাসকারী রাখী ভট্টাচার্য, যিনি পেশায় একজন গায়িকা এবং গৃহবধূ, বলেন,” অ্যাড্রিনাল টিউমারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে আজ সম্পূর্ণ রোগ নিরাময়, আমার জীবনে কমবেশি চ্যালেঞ্জ এসেছে। মেডিকা ক্যান্সার হসপিটালের এক্সপার্ট কেয়ার পেতে আমি আমার সুস্থতা ফিরে পেয়েছি এবং সুর, যা আমার জীবনের অন্যতম ভালবাসার – এখন পরিপূর্ণ জীবন কাটাচ্ছি।”
কার্তিক চন্দ্র ঘোষ বলেন,” ব্লাডার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ ছিল না। যখন এটি ধরা পড়েছিল, তখন এটি প্যাথলজিক্যাল টিউমার পর্যায়ে ছিল। তবে মেডিকা অনকোলজি টিমের সাহায্যে ও সাপোর্ট পেয়ে আমি এখন ক্যান্সার ফ্রি। আমি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কর্মরত রয়েছি এবং বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে খুব আনন্দ পাই – প্রতিটা দিন নতুন করে বাঁচছি আরো আশা আর কৃতজ্ঞতা নিয়ে।”
অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার, মনিপাল হসপিটাল, পূর্ব, বলেন,” মানুষের মনের জোর যে কোন জিনিসের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং তার ক্ষেত্রে যাই হোক না কেন, এই বিশেষত্ব থেকেই যায়। আমরা হাওয়ার গতিবেশ বদলাতে পারব না কিন্তু পাল ঠিক করতেই পারি। তাই যদি ক্যান্সার আক্রমণ করে, আমরা এটা যেন না ভাবি যে সব শেষ হয়ে গেল বা ক্যান্সার আক্রমণ আমরা আটকাতে পারব। তবে আমরা ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে পারি আর নতুন উদ্ভাবন আর প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ও ক্লিনিক্যাল প্রোটোকল নিয়ে কিভাবে রোগের চিকিৎসা করতে পারি। এই বছরের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বাজেটে পরের তিন বছরের মধ্যে প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ডে কেয়ার ক্যান্সার সেন্টার গড়ে তোলার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের অনেক আশা ও সাহস জুগিয়েছে। এছাড়া আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি। আশা হারালে চলবে না, বরং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।”


Discover more from SRB News Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.