Spread the love

পারিজাত মোল্লা ,

‘গা ছমছম কি হয়, কি হয়?’ হ্যাঁ, সন্ধে নামলেই মঙ্গলকোটে বর্তমান পরিস্থিতি এটাই।সম্প্রতি মঙ্গলকোটের নুতনহাটে অবস্থিত ব্লক তৃণমূল অফিস দখল – বেদখল ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য রয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে ।ইতিমধ্যেই মঙ্গলকোটের বিভিন্ন সড়কপথের পাশাপাশি হেভিওয়েট স্থানীয় নেতাদের বাড়ির সামনে বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার সকালে এক ছাগল চোর কে পেশাদার ভাড়াটে গুন্ডা ভেবে ব্যাপক মারধর করে স্থানীয় একাংশ এলাকাবাসী। পরবর্তীতে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ ওই দুস্কৃতি কে প্রথমে আটক,পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন চুরির কথা জানতে পেরে গ্রেপ্তার করে। “বাজেপ্রতাপপুরের সেখ কাজল নামে ওই ব্যক্তি কে কাটোয়া মহকুমা আদালতে এসিজেম এজলাসে পেশ করা হয়েছে” বলে জানান মঙ্গলকোট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষ মহাশয়। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের আগে থেকেই উত্তপ্ত হলো মঙ্গলকোট।জানা গেছে, মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান চন্দন সরকার ওরফে শান্ত বনাম বর্তমান উপপ্রধান রহিম মল্লিকের বিরোধ। মূলত এলাকার রাশ কার হাতে থাকবে? তা নিয়েই চলছে দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা। বিশাল মোটরসাইকেল বাহিনী রয়েছে দু তরফেই।কিছুদিন আগে মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল অফিস দখল অভিযান ঘিরে দুপক্ষের কয়েক শো লোক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করতে যায়।ঘটনাচক্রে সেসময় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে মঙ্গলকোট আইসি মধুসূদন ঘোষ এই একে অপর কে আক্রমণ রুখে দেন।বর্তমানে ওই ব্লক তৃণমূল অফিসে পুলিশের পাহারা রয়েছে। যাতে অশান্তি কোনক্রমেই না বৃদ্ধি পায়।এলাকায় নজরদারির জন্য তিনশোর মত সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছে স্থানীয় থানার পুলিশ। বিশেষত সদর মঙ্গলকোট এলাকার দুপক্ষের টার্গেট হওয়া নেতাদের বাড়ির সামনে রাস্তায় রয়েছে এইসব সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি। পরিত্যক্ত পুরাতন থানা কে কেউ অপরাধ সংগঠিত করার নিরাপদ করিডর গড়তে না পারে, সেজন্যও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। মঙ্গলকোটের নুতনহাট এলাকায় লজ/হোটেল মালিকদের অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ঘর না ভাড়া দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি এলাকায় অজয় নদের বালিঘাট – ইটভাঁটা গুলিতে কর্মীদের পরিচয়পত্র রাখার কথা জানানো হয়েছে স্থানীয় থানার পুলিশের তরফে। মঙ্গলকোটের বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্ধের পর অনেকেই ভয়ে বাইরে হচ্ছেন না।দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। রাতের দিকে লোডশেডিং হলে আবার আতঙ্ক বাড়ছে বেশি! মঙ্গলকোটের সিংহভাগ সাধারণ মানুষজন চাইছেন – ‘শাসক দলের এই বিভেদ মিটুক তাড়াতাড়ি’। কেননা মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক হানাহানির ইতিহাস বড্ড বেশি দীর্ঘ।নকশাল আমলে রক্তের নদী বয়ে গেছে এই মঙ্গলকোটের বুকে । আবার সিপিএম রাজত্বে মারা গেছেন প্রভাবশালী নেতারা।তৃণমূল জমানাও তার ব্যতিক্রম নয়। জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত সমিতির তিনজন সভাপতি, সিপিএমের জোনাল নেতা, তৃনমূলের উপপ্রধান, অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি প্রভৃতি পদমর্যাদা পূর্ন নেতা/ জনপ্রতিনিধিরা খুন হয়েছেন বিভিন্ন সময়কালে।ঘটনাচক্রে একটি খুনের মামলাতেও দোষী সাব্যস্ত হয়নি অভিযুক্তরা।রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির হাতে মঙ্গলকোটের দুটি খুনের মামলার তদন্তভার রয়েছে। যার মধ্যে একটিতে (ডালিম সেখ) সম্প্রতি কাটোয়া মহকুমা আদালতে অভিযুক্তরা খালাস পেয়েছেন। তাই এলাকায় নুতন করে খুনখারাপি হলে সুবিচার কেউ পাবেন?তার আশা অনেকেই রাখেন না। কেননা আদালতের কাছে যথাযথ তথ্য প্রমাণ পেশ করা তদন্তকারীদের উপর রাজনৈতিক চাপ থাকে বেশি বলে অনেকেই নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক শর্তে জানিয়েছেন। বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, -‘মঙ্গলকোটের এই চাপা উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ানোর পেছনে এক পুলিশ অফিসার ক্রমাগত কলকাঠি নাড়ছেন’।মঙ্গলকোটের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাক্তন উপপ্রধান চন্দন সরকার ওরফে শান্ত রয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শিবিরে। এই শিবিরে মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ, প্রাক্তন কয়েকজন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সহ সাংগঠনিক নেতারা রয়েছেন। আবার অন্য শিবিরে রয়েছেন বর্তমান উপপ্রধান রহিম মল্লিক। এই শিবিরে স্থানীয় বিধায়ক, ব্লক তৃণমূল সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ সিংহভাগ জনপ্রতিনিধি সহ সাংগঠনিক নেতারা রয়েছেন। মঙ্গলকোটের এই দুপক্ষের বিবাদে আবার তৃতীয় পক্ষের আগমন ঘটেছে!স্থানীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন বীরভূমের এই তৃতীয় পক্ষের ফাঁদে পা দিয়েছেন মঙ্গলকোটের দু পক্ষের একাংশজন। এতে মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে একে অপরের প্রতি তৈরি হয়েছে চরম অবিশ্বাস। স্থানীয় দুপক্ষের চলছে চরম শক্তিপ্রদর্শন। ভিন রাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকরা আর্থিক চুক্তিতে এই দুপক্ষের আহবানে মঙ্গলকোটে ফিরেছে বলে জানা যাচ্ছে।যারা এলাকার দাগি দুস্কৃতি হিসাবে পরিচিত তাদের কে প্রতিনিয়ত থানায় ডেকে হুশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।যাতে অশান্তির পরিবেশ না ফিরে আসে মঙ্গলকোটে।