কলকাতা, ৭ই মার্চ ’25: যুগ যুগ ধরে নারীরা পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও সমাজের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে আসছেন, কিন্তু দায়িত্ব পালনের চাপে তাদের স্বাস্থ্য অনেক সময়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, মণিপাল হাসপাতাল সেই ধারা বদলাতে এক দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেখানে নারীদের স্বাস্থ্য ও ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটি কাজের সঙ্গে যুক্ত পেশাদার নারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ প্রধান, পুলিশ অফিসার এবং আইএএস ও আইপিএস মহিলা সমিতির সম্মানিত সদস্যদের একত্রিত করে এক আলোকিত ও উদযাপনমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, যার মূল ভাবনা ছিল “দ্য পাওয়ার অফ হার”। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে মণিপাল হাসপাতাল গ্রুপের বিভিন্ন ইউনিটের চিকিৎসকরাও উপস্থিত ছিলেন।
“দ্য পাওয়ার অফ হার” শুধুমাত্র একটি থিম নয়; এটি এক দৃঢ় ঘোষণা যে যখন একজন নারী ক্ষমতায়িত হন, তখন পুরো সমাজ তার সুফল ভোগ করে। নারীরা সমাজের নীরব স্থপতি, যারা কর্মজীবন, পরিবার এবং সামাজিক প্রত্যাশার ভারসাম্য রক্ষা করেন, অথচ তাদের নিজেদের সুস্থতা অনেক সময়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। “পাওয়ার অফ হার” হলো সেই সুস্থতার অধিকার পুনরুদ্ধার করা, যাতে প্রতিটি নারী তার স্বাস্থ্য, স্বপ্ন ও কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিতে পারেন। এটি নারীদের দৃঢ়তা, সংগ্রাম, কাঁচের দেয়াল ভাঙার দৃষ্টান্ত ও নতুন সম্ভাবনা তৈরির এক প্রশস্ত সম্মান।
অনুষ্ঠানটির সূচনা হয় জরুরি জীবন রক্ষাকারী বেসিক লাইফ সাপোর্ট (BLS) ও কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (CPR) প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, যা অংশগ্রহণকারীদের জরুরি সঙ্কটে সঠিক প্রতিক্রিয়া জানানোর দক্ষতা প্রদান করে। এরপর এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে ছিল ঐতিহ্যবাহী প্রদীপ প্রজ্জ্বলন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ছিল চিকিৎসকদের দ্বারা পরিচালিত ডক্টর ও পেশেন্ট কেস স্টাডি সেশন। এখানে ডাক্তার সুতানু হাজরা (সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান – অর্থোপেডিক্স, মুকুন্দপুর ইউনিট), ডাঃ পারিজাত দেব চৌধুরী (কনসালটেন্ট – ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, মুকুন্দপুর ইউনিট), ডাঃ সঞ্চিলা তালুকদার (কনসালটেন্ট – প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, মুকুন্দপুর ইউনিট), ডাঃ পূজা আগরওয়াল (কনসালটেন্ট – সার্জিক্যাল অনকোলজি, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল), ডাঃ অরিন্দম পাণ্ডে (সিনিয়র কনসালটেন্ট – কার্ডিওলজি, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল), ডাঃ অমিতাভ ঘোষ (কনসালটেন্ট – জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি, ঢাকুরিয়া ইউনিট), ডাঃ শাশ্বতী সিনহা (কনসালটেন্ট – ক্রিটিক্যাল কেয়ার, ঢাকুরিয়া ইউনিট), ডাঃ ইরিনা দে (কনসালটেন্ট – প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ), এবং ডাঃ অংসু সেন (কনসালটেন্ট – নিউরোলজি, সল্টলেক ইউনিট) বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক চিকিৎসা কেস শেয়ার করেন, যা নারীদের অসামান্য সাহস ও সময়োপযোগী চিকিৎসার মাধ্যমে জীবন বদলের কাহিনী তুলে ধরে।
এরপর এক চিন্তাশীল প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারীদের বিভিন্ন জীবনপর্যায়ের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনা যায়। প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ প্রেরণা গোয়েঙ্কা (কনসালটেন্ট – শিশু ও নবজাতক স্বাস্থ্য, সল্টলেক ইউনিট), ডাঃ অভিনিবেশ চ্যাটার্জী (কনসালটেন্ট – প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, সল্টলেক ইউনিট), ডাঃ সঞ্চিলা তালুকদার (কনসালটেন্ট – প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, মুকুন্দপুর ইউনিট), ডাঃ অরুণাভ রায় (সিনিয়র কনসালটেন্ট ও প্রধান – গাইনোকলজিক অনকোলজি ও ওমেন ক্যান্সার ইনিশিয়েটিভ, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল), ডাঃ রাজীব বসু (কনসালটেন্ট – অর্থোপেডিক্স, ঢাকুরিয়া ইউনিট) এবং ডাঃ শুভাশিস রায় চৌধুরী (সিনিয়র কনসালটেন্ট – ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, ব্রডওয়ে ইউনিট)।
আলোচনায়, ডাঃ প্রেরণা গোয়েঙ্কা বলেন, “কিশোরী মেয়েদের পুষ্টির অভাব, বিশেষত ক্যালসিয়াম ও আয়রনের ঘাটতি তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।”
ডাঃ অভিনিবেশ চ্যাটার্জী বলেন, “কৈশোরকালীন পরিবর্তন, স্বাস্থ্যবিধি, স্যানিটেশন এবং যৌন শিক্ষার বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক, যা ভবিষ্যতের জন্য সঠিক স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।”

ডাঃ সঞ্চিলা তালুকদার বলেন, “PCOD, অনিয়মিত মাসিক, রক্তাল্পতা, স্থূলতা এবং মেনোপজ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি মহিলাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ডাঃ অরুণাভ রায় বলেন, “স্তন ক্যান্সার এবং জরায়ু ক্যান্সারের মাত্রা বাড়ছে, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা গ্রহণের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।”
ডাঃ রাজীব বসু বলেন, “মধ্যবয়সী মহিলাদের মধ্যে অস্টিওপরোসিস ও বাতের সমস্যা বেশি দেখা যায়, যা সময় মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে এড়ানো সম্ভব।”
ডাঃ শুভাশিস রায় চৌধুরী বলেন, “নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে, অথচ এর লক্ষণগুলি অনেকসময় উপেক্ষিত থেকে যায়। নিয়মিত হার্ট চেক-আপ, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
স্বাস্থ্য আলোচনার পাশাপাশি, অনুষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তাদের সম্মান জানানো হয়, যারা প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন।


Discover more from SRB News Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.