কলকাতা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪: কার্ডিয়াক কেয়ারের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি করল মনিপাল হসপিটাল, পূর্ব ভারতের অন্যতম সবচেয়ে বড় হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক, যারা ঘোষণা করল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত প্রয়োজন ওয়ারলেস ইঞ্জেক্ট করা যায় এমন পেসমেকার। এটি তৈরি করেছে অ্যাবট, কয়েকদিন আগেই তাদের এভির লিডলেস পেসমেকার ভারতীয় বাজারে এসেছে। বলাই বাহুল্য, মনিপাল হসপিটাল ঢাকুরিয়া পূর্ব ভারতের প্রথম সেন্টার যেখানে এর ব্যবহার হল। এই জীবন বাঁচানো ডিভাইস এর মধ্যেই ইনসার্ট করা হয়েছিল ৬৫ বছরের এক রোগীর হার্টে। ভবিষ্যতের পেসমেকার নেওয়ার অন্যতম প্রথম উদাহরণ এটি। এটি ইতিমধ্যেই ব্যবহার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে। এই অত্যাধুনিক পেসমেকার ভারতীয় রোগীদের অনেক নিরাপদ এবং কম ইন ভে সিভ বিকল্প হিসেবে সাধারণ পেসমেকার এর থেকে অনেক এগিয়ে। এর সাহায্যে সহজেই হার্ট রিদমের ডিসঅর্ডার সামলানো সম্ভব হবে।
এই ইভেন্টে যোগদান করেন মনিপাল হসপিটালের বিভিন্ন স্বনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট, যার মধ্যে ছিলেন ডঃ পিকে হাজরা, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, মনিপাল হসপিটাল, ঢাকুরিয়া, ডঃ সুমন্ত চ্যাটার্জি, কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট, মনিপাল হসপিটাল, ঢাকুরিয়া, ডঃ সৌম্য কান্তি দত্ত, কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, মনিপাল হসপিটাল, ঢাকুরিয়া। উপস্থিত বিশেষজ্ঞজন সকলেই বলেন যে ভারতে পেসমেকার লাগানোর অস্ত্রোপচার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাই ওয়ারলেস পেসমেকার অনেক ভালো বিকল্প হতে পারে। রাজেশ পারিখ, ইউনিট হেড, মনিপাল হসপিটাল, ঢাকুরিয়া, এই ইভেন্টে যোগদান করেছিলেন এবং তিনিও হসপিটালের দায়বদ্ধতার কথা বলেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সমাধান আনার ক্ষেত্রে।
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের জার্নাল অনুসারে প্রতি বছর ভারতে প্রায় ৪০,০০০ মানুষের পেসমেকার লাগানোর অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। এভির লিডলেস পেসমেকার এর ওজন মাত্র ২.৪ গ্রাম আর হার্ট সঠিক ভাবে পজিসন করার জন্য ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রায় ২০-২৫ বছরের আয়ু সমেত এই ডিভাইসের জীবনকাল সাধারণ পেসমেকারের চেয়ে তিন গুণ বেশি। সাধারণ পেসমেকারের আয়ু ৭-৮ বছর। তাই লিডলেস পেসমেকার ব্যবহার করলে পেসমেকার বদল করার প্রয়োজন অনেক কমে যাবে। এছাড়া এই পেসমেকার এর নন – ম্যাগনেটিক ডিজাইন থাকার কারণে এয়ারপোর্ট স্ক্যানার, এম আর আই মেশিন, হাই ভোল্টেজ ইলেট্রিক কারেন্ট কোন ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হয় না এবং রোগীর দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে কোন সময় বাধা তৈরি হয় না।
ডঃ পিকে হাজরা, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, মনিপাল হসপিটাল ঢাকুরিয়া এই নতুন ডিভাইসের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন,” যদিও এই পেসমেকার রিচার্জ করা সম্ভব নয়, তবুও এর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা রয়েছে। এটির ক্ষেত্রে সহজেই সিঙ্গেল থেকে ডুয়াল চেম্বারে পরিকাঠামোগত পরিবর্তন করা যাবে, যার ফলে রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা এবং দীর্ঘকালীন সমস্যা লাঘব হবে। এটি নির্ভুল ভাবে হার্টের ডান দিকের অলিন্দ (atrium) এবং ডান দিকের নিলয়ের (ventricle) এর ফারাক ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই পেসমেকার শুধুমাত্র যে ইনভেসিভ অস্ত্রোপচার ও বহিরাগত তারের ব্যবহার কমিয়ে দেয় নয়, তার সাথে ব্লু টুথ যুক্ত প্রযুক্তি রয়েছে। এর ফলে দূর থেকে মনিটর করা এবং অ্যাডজাস্ট করা সম্ভব হবে। সারা পৃথিবী থেকে বিশেষজ্ঞরা এখন সহজেই রোগীদের মনিটর করতে পারবেন আর তাই নিয়মিত হসপিটালে গিয়ে চেকআপ করার প্রয়োজনীয়তা ফুরোবে।”
ডা. দিলীপ কুমার, ডিরেক্টর, কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাব এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও ইলেক্ট্রোফিজিওলজিস্ট, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল (মণিপাল হাসপাতালের একটি ইউনিট) বলেছেন, “ওয়ারলেস পেসমেকার এখন একটি সম্পূর্ণ বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে। যদিও ওয়ারলেস পেসমেকার নতুন নয়, পূর্বের মডেলগুলি অ্যাট্রিয়াম এবং ভেন্ট্রিকল উভয় চেম্বারে পেস করতে সক্ষম ছিল না। এই উদ্ভাবন আমাদের উত্তেজিত করে কারণ এটি হেমাটোমা গঠনের মতো জটিলতা, সংক্রমণ, লিড সরে যাওয়া এবং অন্যান্য লিড-সম্পর্কিত সমস্যাগুলির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। এটি চিকিৎসক এবং রোগী উভয়ের জন্যই অতুলনীয় স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে।”
ডঃ সুমন্ত চ্যাটার্জি, কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট, মনিপাল হসপিটাল, ঢাকুরিয়া, বলেন,” এই পেসমেকার নতুন রাস্তা খুলে দিল রোগীদের জন্য যাদের ক্ষেত্রে সাধারণ পেসমেকার লাগানো সম্ভব নয়। সাধারণ পেসমেকারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হল
ইনভেসিভ অস্ত্রোপচার যার মাধ্যমে ডিভাইস আর তার বুকে লাগানো হয় এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়। এই ইঞ্জেক্ট করা সম্ভব ওয়ারলেস পেসমেকার সরাসরি হার্টের ডান দিকের নিলয়ে চলে যায়। তার ফলে কোন বাইরের তার বা সার্জিক্যাল পকেটের কোন প্রয়োজন থাকে না, যেগুলো অনেক সময়েই সংক্রমণের জন্য দায়ী হয়। এই ডিভাইস তাদের জন্য একদম ঠিকঠাক যাদের ইমিউনিটি কোন কারণে কম বা ত্বকের সমস্যা রয়েছে, বা কারোর ডায়ালিসিস চলছে বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেতে হয়। এই ডিভাইস এর ক্ষেত্রে যে খুবই কম মাত্রায় যে ইনভেসিভ ব্যবহার করা হয়, এর ফলে বয়স্ক মানুষদের জন্য কার্যকরী বা কম বয়সী মহিলাদের জন্য উপযোগী যেহেতু কোন দাগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
সারা বিশ্বের মধ্যে ভারত তৃতীয় দেশ যারা ইউএসএফডিএ (USFDA) এবং ইউরোপিয়ান মেডিক্যাল অথরিটি দ্বারা অনুমোদনপ্রাপ্ত ইঞ্জেক্ট করা যায় এমন পেসমেকার গ্রহণ করেছে, যা দেশের সার্বিক ভাবে কার্ডিয়াক হেলথকেয়ার এর দিকটি উন্নতি করতে পারে। তবে এই পুরো পদ্ধতি শুধু প্রফেসনালদের দ্বারাই সম্ভব, যাদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন রয়েছে। তাহলেই সেরা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এই নতুন ওয়ারলেস পেসমেকার ভারতের রোগীদের একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দেবে, যার ফলে কার্ডিয়াক কেয়ারের ক্ষেত্রে জীবনধারণের মান আরো উন্নত হয়ে যাওয়া সম্ভবপর হবে।
Discover more from SRB News Bangla
Subscribe to get the latest posts sent to your email.