কলকাতা, ৮ এপ্রিল, ২০২৫: এক নজিরবিহীন মানবতা ও চিকিৎসাগত উৎকর্ষতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, মনিপাল হাসপাতাল ব্রডওয়ে-র দক্ষ চিকিৎসক দল ১৯ মার্চ একটি বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া ১৬ বছর বয়সী এক মেয়েকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মেয়েটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন ছাত্রী, যিনি তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। ঘটনার রাতে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে আনার সময় তিনি কোমায় ছিলেন, রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল, হার্ট রেট ক্রমাগত কমছিল, রক্তচাপ ছিল বিপজ্জনকভাবে নিচে, ও একাধিক হাড় ভাঙা এবং শারীরিক আঘাতে কাহিল ছিলেন। জরুরি বিভাগের সামনে পৌঁছানোর আগেই তাঁর প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি টিম তৎক্ষণাৎ নেতৃত্বে আসেন ড. সুশ্রুতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধান – আইসিইউ ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার। একদিন পরই পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, সেই সময় মনিপাল হাসপাতাল ব্রডওয়ে নিজে থেকেই আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং মনিপাল ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ চিকিৎসার খরচের দায়িত্ব গ্রহণ করে। মেয়েটির সংক্রমণ রোধ ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য প্রথমে জরুরি ভিত্তিতে ফিমার অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাঁর ভাঙা হিউমারাস হাড়ের অস্ত্রোপচার করেন ড. সোহম মণ্ডল, পরামর্শদাতা – অর্থোপেডিক্স ও জয়েন্টস। নয় দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর, ধীরে ধীরে তাঁকে সেখান থেকে বের করে আনা হয় এবং জেনারেল বেডে স্থানান্তর করা হয়। গত শনিবার, ৫ এপ্রিল, তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় – তাঁর পরিবারের ও চিকিৎসক দলের কাছে এটি ছিল এক পরম স্বস্তির মুহূর্ত।
ড. সুশ্রুতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যখন মেয়েটিকে আনা হয়, তখন সে কোমায় ছিল ও সম্পূর্ণভাবে হেমোডাইনামিক্যালি অস্থিতিশীল। রক্তচাপ খুব নিচে, মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস চরম পর্যায়ে, ও বহু অঙ্গ বিকল হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তার ফিমার ও হিউমারাস হাড় ভেঙে গিয়েছিল, এমনকি গলায় ইনজুরি ছিল, যা যে কোনও সময় গুরুতর হয়ে উঠতে পারত। হার্ট রেট ক্রমশ কমছিল, আর আমাদের হাতে সময় ছিল খুবই কম। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা শুধুই তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস সচল রাখা, অ্যাসিডোসিস নিয়ন্ত্রণে আনা ও অঙ্গগুলিকে সচল রাখাই ছিল মূল লক্ষ্য। আমাদের কাছে তিনি শুধুমাত্র একজন রোগী ছিলেন না—তিনি ছিলেন একজন কিশোরী, যার সামনে গোটা জীবন পড়ে আছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল সর্বসম্মত। একজন চিকিৎসক ও একজন মানুষ হিসেবে এটা করা আমাদের কর্তব্য ছিল। যখন দেখি তিনি নিজে শ্বাস নিচ্ছেন, ভেন্টিলেটর ছেড়ে উঠছেন—এটি আমার কেরিয়ারের অন্যতম তৃপ্তিকর মুহূর্ত।”
ড. সোহম মণ্ডল বলেন, “যখন আমি তাঁর এক্স-রে দেখি, বুঝতে পারি চোট কতটা গুরুতর। শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী হাড় ফিমার ভেঙে গিয়েছিল, এবং দুটি হিউমারাস হাড়ও ভাঙা ছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচারে এগিয়ে যাই। কেসটি শুধু চিকিৎসাগত দিক থেকেই চ্যালেঞ্জিং ছিল না, মানসিক দিক থেকেও ছিল, কারণ তিনি মাত্র ১৬, এক কিশোরী, যিনি তখন আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। যেদিন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাঁর মুখের হাসি আমাদের আবার মনে করিয়ে দেয়—আমরা কেন চিকিৎসক হয়েছি। এটি শুধুই একটি কেস ছিল না—এটি ছিল জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ।”
ড. অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল সিওও, মনিপাল হাসপাতালস (পূর্বাঞ্চল), বলেন, “মনিপালে আমরা বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র আর্থিক অক্ষমতার জন্য কোনও জীবন শেষ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। যখন আমরা জানতে পারি, একজন ১৬ বছরের মেয়েকে কোমায়, একাধিক ভাঙা হাড় নিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য কেউ নেই—আমাদের প্রতিক্রিয়া ছিল একেবারেই মানবিক। এটি শুধু একটি মেডিকেল এমার্জেন্সি ছিল না, এটি ছিল একটি মানবিক সংকট। মনিপালে আমরা বিশ্বাস করি, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা কেবল কিছু মানুষের জন্য নয়—এটি সবার অধিকার হওয়া উচিত, বিশেষত এমন সংকটময় মুহূর্তে। মনিপাল ফাউন্ডেশন ও আমাদের হাসপাতাল টিমের সহায়তায় আমরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। প্রাণ বাঁচানো, সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ দেওয়াই ছিল মূল লক্ষ্য। আজ যখন দেখি তিনি উঠে বসছেন, একটি নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে চলেছেন—এটাই আমাদের কাজের আসল প্রেরণা।”


Discover more from SRB News Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.