কলকাতা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪: মাটির থেকে যখন যাত্রী ঠাসা উড়োজাহাজ যখন হাজার হাজার ফিট উপরে, তখনই কখনও কখনও মেডিক্যাল ইমার্জেন্সী দেখা দেয়। এরকমই এক ঘটনায় একজন যাত্রীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আর দ্রুত তার চামড়া যেন মলিন হতে শরীর করে। বাকি যাত্রীরা সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়েন কিন্তু কি করবেন কূলকিনারা করতে পারছিলেন না। এই অবস্থায় ডঃ স্মিতা মৈত্র, কনসালটেন্ট এবং ইমার্জেন্সী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত, মনিপাল হসপিটাল, ব্রডওয়ে এগিয়ে আসেন পরিস্থিতি সামাল দিতে।
এই ঘটনাটি হয় গত ৬ই ডিসেম্বর কলকাতা – দিল্লি ফ্লাইটে, যেখানে বিকানেরের ৪৫ বছর বয়সী মহিলা হঠাৎই হাইপারটেনশিভ হার্ট ফেলিওরের সম্মুখীন হন। ঘটনাচক্রে ওনার উচ্চ রক্তচাপের লম্বা ইতিহাস রয়েছে।
এই যাত্রী, একাই কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। মধ্য আকাশে তখন উড়োজাহাজ ওড়ার স্রেফ পনেরো মিনিট হয়েছে, শরীর খারাপ হতে শুরু করে। প্রথমে শরীর একটু ভালো না লাগা থেকে শুরু হয়ে রীতিমত শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর সাথে অসম্ভব বুকে ব্যথা আর চোকিং হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। দ্রুত সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় এই যাত্রীর – খুব ঘামতে শুরু করেন তিনি। খুব ছটফট করতে শুরু করেন এবং আর কথা বলার জায়গায় ছিলেন না। কিছু মুহূর্তের মধ্যে তার রক্তচাপ বেড়ে হয়ে যায় ২৪০/১২০ মিলিমিটার মার্কারি, যা যথেষ্ট ঝুঁকির এবং শ্বাস প্রশ্বাস প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।
এই অবস্থায় যখন পরিস্থিতি রীতিমত হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, কেবিন ক্রু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এই সময়ে নায়কোচিত ভাবে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ডঃ স্মিতা মৈত্র, কনসালটেন্ট এবং ইনচার্জ, ইমার্জেন্সী বিভাগ, মনিপাল হসপিটাল, ব্রডওয়ে। উনি তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। রোগীর অবস্থা দ্রুত দেখে নিয়ে, তিনি হাইপারটেনসিভ হার্ট ফেলিওরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যখন হৃদরোগে আক্রান্ত বা রেসপিরেটরি কোলাপস হয়ে যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা থাকে।
ফ্লাইটে এই ইমার্জেন্সী অবস্থায় খুব কম উপকরণ থাকে যেখানে, তিনি দ্রুত এগিয়ে এসে সিদ্ধান্ত নেন:

  • রোগীর উপর ল্যাসিক্স ইনজেকশন প্রয়োগ করেন যাতে ফ্লুইড বেড়ে যাওয়ার সমস্যার উপশম হয়
  • সাবলিঙ্গুয়াল নাইট্রোগ্লিসারিন দেন যাতে বুকে ব্যথার কষ্ট কমে
  • ইকোস্প্রিন দেন যাতে কার্ডিয়াক স্ট্রেস কমে
  • স্বাস প্রশ্বাসের সুবিধার জন্য রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়
    যখন রোগীর অবস্থা স্বাভাবিক হয়, ক্রু পাইলটকে জানায় এবং ফ্লাইট ঘুরিয়ে দেওয়া হয় রাঁচির দিকে, যেখানে একটি ইমার্জেন্সী মেডিক্যাল টিম অপেক্ষা করছিল রোগীর আপৎকালীন চিকিৎসার জন্য। বলাই বাহুল্য, ফ্লাইটের মধ্যে তখন ডাক্তারের উপস্থিতি না থাকলে, খুব খারাপ কিছু হতে পারত।
    ডঃ স্মিতা মৈত্র, কনসালটেন্ট এবং ইনচার্জ, ইমার্জেন্সী বিভাগ, মনিপাল হসপিটাল, ব্রডওয়ে, বলেন,” এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রতিটা সেকেন্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব প্রয়োজন এই সময়ে। এই ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া বা রেসপিরেটরি ফেলিওর হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা ছিল। আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে আমার ট্রেনিং ও অভিজ্ঞতার দরুন আমি দ্রুত আপৎকালীন চিকিৎসায় অগ্রসর হতে পারি এবং ফ্লাইট রাঁচিতে নামার আগে রোগীকে কিছুটা স্থিতিশীল করতে পারি। ডাক্তার হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় পাওনা যে আমি ওনার প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি।”

ডঃ মৈত্রর এই আপৎকালীন চিকিৎসার সৌজন্যে যখন ফ্লাইট রাঁচিতে নামে, রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। রোগীকে হুইলচেয়ারে করে স্থানীয় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীকালে জানা যায় যে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরেছেন।


Discover more from SRB News Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.