পুজোর বদ্যি বেজে গেছে। মা আসছে সান দিয়াগোতে একটু অন্য ভাবনাচিন্তা নিয়ে। বিশ্ব জুড়ে অভয়াকে নিয়ে যে আন্দোলন চলছে তার প্রভাব পড়েছে সান দিয়াগোর বাঙালীদের মনেও। প্রতিবাদ, আন্দোলন মিছিলের মাঝেই মৃন্ময়ী মাকে বরণ করে নেবে সান দিয়াগো বাসী। পুজোর আয়োজন করা হয়েছে বারো ও তেরোই অক্টোবর। শরৎ ঋতু আর মৃন্ময়ীমায়ের আগমন অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। সেই ডাকও যেন আমরাও শুনতে পাচ্ছি। গাঢ় নীল আকাশের বুকে শত সহস্র মেঘের বিচরণ, হাওয়ার দোলায় বয়ে যাওয়া কাশফুলের গায়ে মায়ের মুখ। আসলে বছরের একটা সময় মায়ের আসা ও চলে যাওয়ার মধ্যে অনেক দুঃখ, যন্ত্রনা অভিমান জমে যায়। প্রার্থনা করি যাতে আমরা সকলে মায়ের আরাধনার মাধ্যমে নিজেদের কে মুক্ত করতে পারি।

দেখতে দেখতে সান দিয়াগো “সৈকতের” দুর্গাপুজো ঊনিশতম বছরে পা দিল। আজ পঁচিশ বছর আমেরিকায় আছি চোখের সামনে দেখলাম গুটি গুটি পায়ে ছোট পুজো কেমন বড় হয়ে গেলো। শয়ে শয়ে বাঙালী তাদের সেরা পোশাকটি পড়ে হাজির হন পুজো মন্ডপে। আমিও তার ব্যতিক্রম নয়। ঢাকের আওয়াজে স্কুলবাড়ী গমগম করে ওঠে। জ্বলজ্বল করে ওঠে মাতৃপ্রাতিমার মুখ। বাঙালী, অবাঙালি ও আমেরিকান মিলিয়ে বারোশো লোকের জমায়েত হয় এই পুজোর দুদিনকে কেন্দ্র করে। তাই নেওয়া হয়েছে একটি স্কুলের অডিটোরিয়াম এবং তার জন্য স্কুলের কর্তৃপক্ষের অনুমতি। এখানে পুজো করার অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে। সে সব মেনেই মাতৃ আরাধনা করা হয়। দুৰ্গাপূজা দুদিন ধরে চলে দেদার খাওয়া দেওয়ার আয়োজন। আযোজন করা হয় বিভিন্ন রকমের সাংকৃতিক অনুষ্ঠানের। তবে এবারে অভয়াকে স্মরণে রেখেই অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হয়েছে। লোকাল শিল্পীদের নিয়ে তৈরী গান বা নাচ সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। শুধু তাই নয় ঢাকের বোলেও থাকবে প্রতিবাদ। দেশ থেকে আসছে ফকিরা ব্যান্ড ও ইন্ডিয়ান আইডলের সেঁজুতি দাস সান দিয়াগোবাসীকে আনন্দ দিতে।

আমরা সান দিয়াগোবাসী সবাই মিলে একাত্মভাবে কাজ করি। শারদ উৎসব হল বন্ধন মুক্তির ডাক যার এক ডাকে আমরা সবাই মিলিত হই। পুজোর ফল কাটা থেকে মালা গাঁথা আবার নাড়ু বানানো থেকে ভোগ নিবেদন সবাই যে যার দায়িত্ম ভাগ করে নেয়। প্রত্যেক বছর পুজোর সময় সৈকত থেকে বেরোয় সৈকতের নিজস্ব পত্রিকা “ সৈকত”। ছোট বড় সকলেই তাদের মনের কথা প্রকাশ করে এই পত্রিকার মাধ্যমে। পুজো ছাড়াও প্রচুর সেবামূলক কাজ করে এই সৈকত সংগঠন। দেশের দুটি শিশুর পড়াশুনার ভার তুলে নিয়েছে, তুলে নিয়েছে চ্যারিটির মাধ্যমে পচিমবঙ্গের কিছু মহিলাদের সুস্থ স্বাস্থ্যের ভার।

পুজো প্রায় দোর গোড়ায়। রাতের জমাট কুয়াশা সকালে ঘাসের ডগায় যে ঝকঝকে শিশির বিন্দু ছড়িয়ে রাখে, প্রথম সূর্যের আভায় তা মায়ের গয়নার মতো ঝলমলিয়ে ওঠে। বাড়ীর সামনের হাস্নুহানা ফুলগুলোর গন্ধে কেমন যেন মন কেমন করা অনুভতি। এক দৌড়ে যেন পৌঁছে যাই আমরা ছোটবেলায়।


Discover more from SRB News Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.