বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী ব্লকের গ্রাম পলাশডাঙ্গা. সেখানে বাঁড়ুজ্যে বাড়ির প্রাচীন দুর্গাপুজো। দুর্গাপুর থেকে অহণ্যা হয়ে সোনামুখী যাওয়ার বাসে পলাশডাঙ্গা পৌঁছানো যায়
পলাশডাঙ্গা হাইস্কুল স্টপেজ ।সেখান থেকে মিনিট পাঁচেক হেঁটে গেলেই বাঁড়ুজ্যে বাড়ি ।দুপাশে ধান জমির মধ্যে দিয়ে পাকা রাস্তা দূরে গাছপালায় ঢাকা দিঘি ।
বাড়ির ঠাকুরদালানের সামনে বিশাল সবুজ মাঠ ঘাসে ঢাকা। তার অদূরেই কাশফুলের বন,ওই পথে আরো এগোলে দামোদর নদ। দালানের সামনে মাঠের চারপাশে শরিকদের বাড়ি
বৃদ্ধ শিল্পী বংশপরম্পরায় সাবেকি ঘরানায় একচালা প্রতিমা গড়েন. পুরোহিত মশাই নিষ্ঠা করে পুজোর উপাচার করে চলেন. ঢাকি ঢুলি নৃত্য করে ঢাক বাজায় বাঁড়ুজ্যেদের
পুকুর লিজ নিয়ে যে জেলেরা মাছ চাষ করে তারা এই সময় এক কুইন্টাল মাছ দিয়ে যায় পুজোর খাওয়ানোর জন্য. দশমীর দিন এখানে বিরাট ভোজ, আগে এই গ্রাম আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রায় দশ হাজার লোক আসতো
এখন অবশ্য সংখ্যা অনেক কমেছে. মেনুতে এখনো ভাত ডাল, ছেঁচড়া, তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস, বোঁদে. আসলে হয়তো মানুষকে খাওয়ানো মানুষের মঙ্গল সাধন করার মহৎ উদ্দেশ্যেই দুশো বছরেরও আগে বিধ্বংসী বন্যায় মানে বারোশো বাইশ বাংলার সময় থেকে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল সেই পুজোর প্রদীপ শ্রীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে জ্বালানোর আগেই সলতে পাকানোরও একটা ইতিহাস আছে. এই বংশের উর্দ্ধতন পূর্বপুরুষ গোকুল চন্দ্র নদীয়া জেলার ফুলিয়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি সন্ন্যাসী হওয়ার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেন. এদিকে ঘুরতে ঘুরতে দামোদর নদীর তীর বরাবর এখানে এসে এই পলাশডাঙ্গা জায়গাটি তার ভালো লাগে. এটা বারোশো দুই ইংরেজির সাতেরোশো পঁচানব্বই খ্রিস্টাব্দের ঘটনা. কিছুকাল এখানে পর্ণকুঠিরে বাস করে তিনি বর্ধমানের মহারাজা তেজ চন্দ্র মোহতাব বাহাদুরের কাছে কিছু ব্রহ্মত্ব জমি প্রার্থনা করেন. মহারাজ তাকে কিছু নিষ্কর জমি দান করেন সেখানে বাঁকুড়া জেলার এই অঞ্চলে সতেরোটি মৌজায় মহারাজের অনেক জমি ছড়ানো ছিল. গোকুল চন্দ্র নিস্কর সেই জমির এবং এক অংশে পাকাপাকি ভাবে বাস করতে থাকেন. ও বসবাস শুরু করেন. বারোশো বাইশ সালে বিধ্বংসী বন্যায় এই এলাকা সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়ে. গোকুল চন্দ্রের বাড়ি জলে ধুয়ে যায় ,বন্যার জল থামলে গোকুলের পুত্র ষষ্ঠীচরণ বর্তমান এই জায়গায় উঠে আসেন. নতুন বাড়ি বানান এবং তাঁর তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে শ্রীকান্ত ঐ বছর থেকে
সকল গ্রামবাসীর কল্যাণের জন্য এই দুর্গাপুজো নতুন করে শুরু করে , তাঁর দুই ছেলে রমেশচন্দ্র ঈশান চন্দ্র পালা করে পুজো করে থাকেন রমেশের তিন ছেলে সতীশ জ্যোতিষ ও শ্রীস্চন্দ্র এবং ঈশানের দৌহিত্র তাদের পালা করে এই দায়িত্ব এগিয়ে নিয়ে যান. এখন তৃতীয় প্রজন্মের পালা পরে ছয় বছর অন্তর. এই সতীশ জ্যোতিষ ও শ্রীসচন্দ্র খুবই সম্মানীয় মানুষ ছিলেন. জ্যোতিষচন্দ্র খুব নাম করা উকিল ছিলেন. আর আর খুব বিখ্যাত. এবং উনি জমিদারিও কিনেছিলেন আর শ্রীস চন্দ্র ছিলেন মুন্সেট. তারা এই বংশকে গৌরবান্বিত করেন. জ্যোতিষের তিন ছেলে পরে আলাদা করে পালা করায় তাদের পুজো করে আঠারো বছর অন্তর আর শ্রীসের এক ছেলে শৈলেশ চন্দ্র বলে তাদের পুজো এক ছেলে বলে তাঁদের পুজো ছবছরেই পরে।শৈলেশচন্দ্রের নাতি সুদীপ্ত বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি একাধারে নাট্যকার অভিনেতা এবং চিত্র পরিচালক বহু বছর ধরেই নাটকের সঙ্গে যুক্ত ,সম্প্রতি অলৌকিক জ্যোতিষ নামে এই চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন তিনি।
বর্তমানে আঠেরো জন শরিক এখন আর দুই জন দৌহিত্র নিয়ে এই বংশে আছেন. পালা বলতে অবশ্য শুধুই পুজোর খরচ ও কিছু দায়িত্ব. পুজো কিন্তু প্রতিবারই হয় যৌথ উদ্যোগে. অর্থাৎ প্রতিসরিকের প্রতিবছরই কিছু না কিছু অবদান থাকে. আজও পুজোর বিধিমতো সংকল্পের প্রতি বছর প্রতি শরীকের নাম করা হয়. পূজারী থাকে মূর্তিকার, পরিচালক থেকে রাঁধুনি, ঢাকি থেকে নাপিত অথবা গরিব কামিন বউ, আলতা বউ. সবার একসঙ্গে সঙ্গবদ্ধভাবে সবাই পুজোয় কাজ করে চলে।
Related Posts
Spread the love বাঙালির কাছে দুর্গা পুজো মানে এক মহাআনন্দ। পুজোর কটা দিন সবাই মেতে ওঠে আনন্দের সুরে। এই পুজোতে কলকাতা শহরের সেরা পুজো গুলোকে “সিয়া” প্রদান করলো বিশেষ “সিয়া…
Spread the love Kolkata,October 2023 :The most awaited and revered festival of Durgo Pujo is just around the corner, and the Metropolitan Durgabari is all set to host a spectacular…