শ্রীজিৎ চট্টরাজ : দুই নাবালিকা শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ ধর্মগুরু আশারাম বাপুকে গ্রেফতার করে ২০১৩ সালে। তারপর থেকে তারিখ পে তারিখ। শেষপর্যন্ত ২০১৮ সালে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের রায়ে গুরুজির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।২০২৩ সালে আর একটি মামলায় একই শাস্তির বিধান দেয় আদালত।অভিযোগগুলির ভিত্তিতে বাপুজির বিরুদ্ধে আইনের ১২০টি ধারা বলবৎ হয়। তারপর থেকে পুত্রসহ রাজস্থানের যোধপুর জেলে তিনি বন্দী।

এরপর থেকেই বাপুজির অনুগত ভক্তরা ভারত জুড়ে বিক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এক শ্রেণীর মিডিয়াকে টাকা দিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল ও স্বার্থান্বেষী মহল বাপুজির বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র করে । তারই ফলশ্রুতিতে গ্রেপ্তার। ইতিমধ্যে কেটে গেছে ১১ বছর। এই মূহুর্তে বাপুজির বয়স ৮৬। ৯৯ শতাংশ ব্লকেজ নিয়ে গুরুতর হৃদরোগে তিনি আক্রান্ত। গতবছর তাঁকে এইমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর আবার চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বাপুজি চতুর্থবার আক্রান্ত হয়। ভক্তদের তরফে আদালতে আর্জি জানানো হয়, বাপুজির চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিতে। কিন্তু আদালত সেই আর্জ খারিজ করে। ফলে ভক্তদের মধ্যে বিক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিক্ষোভের ঢেউ কলকাতায়ও এসে পৌঁছেছে।রবিবার সকালে উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্ক থেকে ভক্তদের একটি বিক্ষোভ মিছিল ধর্মতলায় ওয়াই চ্যানেলে পৌঁছয়। ভক্তদের এক প্রতিনিধি দল রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন।সেই স্মারকলিপিতে তাঁদের ধর্মগুরু আশারাম বাপুর মুক্তি দাবি করেছেন।

সাংবাদিকদের ভক্তমন্ডলী সংঘের পদাধিকারী অবিনাশ দুবে বলেন, দেশের বিরূদ্ধে জঙ্গি কাজ করে অপরাধীরা মুক্তি পাচ্ছেন। কিন্তু মিথ্যে অভিযোগে আজীবন সাজাপ্রাপ্ত পূজনীয় গুরু আশারামবাপু ৮৬ বছর বয়সে শারীরিক সংকটে ভুগছেন। তিনি চান আয়ুর্বেদ চিকিৎসা। কিন্তু দেশের প্রশাসন তার ইচ্ছেকে মর্যাদাকে নাকচ করছে। মানবিক কারণে সুচিকিৎসার জন্য তাঁর মুক্তির দাবি আদালতে বারবার খারিজ করা হচ্ছে। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন করেছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছু মেলেনি। হিন্দু সনাতনী ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের ষড়যন্ত্র আমরা আর বরদাস্ত করবো না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছেড়ে আমরা আইন অমান্য করব। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় পর্যন্ত ঘেরাও করব। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল,২০১৩ সাল পর্যন্ত মোদিজী আশারাম বাপুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ তে ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে তিনি দুরত্ব বাড়িয়েছেন এমন অভিযোগ আপনারা করেন। জবাবে ঋষিকুল বিদ্যা পীঠ অধ্যক্ষ রমেশ রাও বলেন, সব রাজনৈতিক দলই রাজনৈতিক প্রয়োজনে ঋষি গুরুদের ব্যবহার করেন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মুখ ঘুরিয়ে নেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে গুরুজির ইচ্ছায় তাঁর চিকিৎসার দাবি খারিজ করছে আদালত। আমরা আর এই অমানবিক আচরণ মুখ বুঝে সহ্য করবো না।

আশারাম বাপুর আরেক শিষ্য ন্যাচারোপ্যাথি চিকিৎসক ডাঃ অমোধ কুমার বলেন, আমাদের পূজ্য গুরু আসারাম বাপু আয়ুর্বেদিক ও ন্যাচারোপ্যাথি চিকিৎসা যা আমাদের দেশের সম্পদ তাই দিয়ে চিকিৎসার কথা বলতেন! তাই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার বহুজাতিক ব্যবসায়ীরা ঘৃন্য ষড়যন্ত্র করে ধর্ষণের অভিযোগ সাজিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। গুরুর বাণীতে আকর্ষিত হয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ মদ, সিগারেট, গুটখা খাওয়া ছেড়েছে। মোবাইল ফোনে আসক্ত যুবসমাজকে সাবধান করেছেন। তাই ব্যবসায়িক স্বার্থে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা কিছু মিডিয়ার সাহায্যে বদনাম করে গুরুজীকে জেলে পাঠিয়েছে। আমরা এর বিরূদ্ধে দেশব্যাপী গণ আন্দোলন ছড়িয়ে দেবো। গুরুজীকে জীবনের শেষ প্রান্তে তাঁকে মুক্ত দেখতে চাই। মহিলা ভক্তদের মধ্যে পম্পি দুবে বলেন, একটি মেয়ের মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে গুরুজীকে আজীবন কারাবাস দেওয়া হয়েছে। তিনি অসুস্থ। চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাঁকে। দেশের নারী সমাজ প্রশাসনের এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হতে চলেছে। রবিবার দুপুর একটায় নির্ধারিত সময়ে আশারাম বাপুর ভক্ত সংগঠনের পক্ষে এক প্রতিনিধি দল রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের হাতে গুরুজির মুক্তির দাবি জানিয়ে এক স্মারকলিপি তুলে দেন। দ্রুত যদি দাবি মানা না হয় তাহলে হয়ত দেশজুড়ে আশারাম ভক্তদের এই বিদ্রোহ হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রাক্কালে অস্বস্তির কারণ হতে পারে দেশের শাসক দলের জন্য।


Discover more from SRB News Bangla

Subscribe to get the latest posts sent to your email.