“প্রিয় সাথী,
লক্ষ লক্ষ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর, ৩৫০০ কিমি যাত্রা শেষে আপনাদের এই চিঠি লিখছি। এই যাত্রা আমার জীবনকে সর্বার্থেই সমৃদ্ধতর করেছে আর যাত্রাপথে প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে যে ভালোবাসা আমরা পেয়েছি, তা কখনওই ভোলার নয়।
চলতে চলতে আমি শুনেছি আপনাদের কথা। আপনাদের দুশ্চিন্তা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। চিন্তা কর্মসংস্থানের অভাব ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আপনারা কৃষি ক্ষেত্রের দুরবস্থা বা কিছু ব্যবসায়ীর হাতে দেশের সম্পদ বিক্রি হয়ে যাওয়া নিয়েও আমায় বলেছেন। আপনাদের কথাতেই স্পষ্ট যে আমাদের দেশ এক কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি আর আমজনতার হাতে লড়াইয়ের রসদ সীমিত। দেশব্যাপী শুধু এক আশাহীনতার, নেতিবাচক পরিবেশ।
আমাদের জাতির যে সবথেকে বড় শক্তির জায়গা, বহূত্ত্ব, তাও আজ চ্যালেঞ্জের সামনে। এই শাসক শুধুই জাতি, ধর্ম, ভাষা বা সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে আমাদের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে চায়। তারা জানে, মানুষ আর্থিক, সামাজিকভাবে যত দুর্বল হবে, ততই তার মধ্যে ‘অপরের’ প্রতি ঘৃণা জাগিয়ে তোলা সহজ হয়। কিন্তু এই যাত্রার পর আমার মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস এসেছে যে এই ঘৃণার শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব। একে পরাজিত করা দরকার।
আমি লড়বো। রাস্তা থেকে সংসদ- সব জায়গায়। আমার লড়াই হবে কৃষকের ফসলের ন্যায্য দামের জন্য, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উত্থানের জন্য, নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিপুল কর্মসংস্থানের জন্য। আমি লড়বো জাতীয় সম্পদের ন্যায়পূর্ণ বন্টনের জন্য, আমার লড়াই চলবে সস্তার পেট্রোল-ডিজেল বা পাঁচশো টাকায় রান্নার গ্যাসের জন্য। আমার লড়াই আপনাদের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য– কিছু মুষ্টিমেয় বন্ধু শিল্পপতির জন্য নয়।
আমার দেশের মানুষ খুব ভালো করেই অনুভব করে যে আমাদের শক্তি নিহিত আছে ‘বহুত্ত্বের মধ্যে একতার’ চিরন্তন মন্ত্রেই। আমরা জাতি, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ, অঞ্চলের উর্দ্ধে উঠে একাত্বতার বন্ধনে পরস্পরকে আলিঙ্গন করতে পারলেই আমাদের দেশ এগোবে, নচেৎ নয়। ঘৃণা, বিভাজন আমাদের শুধুই পিছন দিকে ঠেলছে, এটা আজ দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার সবার কাছে। তাই আমার আওয়াজ, “ভয় তাড়াও!” ভয় ভাঙতে পারলেই, ঘৃণার পরাজয় ঘটবে। আমরা জিতবোই।
এই যাত্রা আমার কাছে এক তপস্যার মতো। আমি এই দীর্ঘ পথ হেঁটে সেই শক্তি পেয়েছি, যা আপনাদের প্রত্যেকের জন্য লড়াইয়ের রসদ যোগাবে আমাকে। আমি সেই প্রান্তিক নীরব লোকটির মুখে আওয়াজ দেবো, অন্ধকারে আলো জ্বালবো। আমার দেশের মহান সংবিধান হবে এই লড়াইয়ের পথ নির্দেশক।
কংগ্রেস পরিবার ১৩৭ বছর ধরে এই দেশের মানুষের সঙ্গে আছে। প্রথমে এই দল দেশকে স্বাধীন করেছে, তারপর একে একত্রিত ও সংহত করেছে, আর তারপর নতুন জগতের সঙ্গে পা মিলিয়ে অগ্রগতির পথে নিয়ে গিয়েছে ভারতকে। দেশের প্রত্যেকটি কঠিন, অন্ধকার সময়ে কংগ্রেস নেতৃত্ত্ব দিয়েছে, এনেছে সুসময়। আজ আমাদের দেশ আবার এক অন্ধকার সময়ে আটকে পড়েছে। তাই কংগ্রেস পরিবার আবার সর্বস্ব পণ করে পথে নেমেছে এই আঁধার কাটিয়ে দেশকে আলোর দিশা দেখাতে। আমরা আমাদের একটা হাত বাড়িয়েছি আপনার দিকে, আপনিও আপনার একটা বাড়িয়ে আমাদের সঙ্গে জুড়বেন, এই আশা নিয়ে। “হাতের সঙ্গে হাত মেলাও” অভিযানে, আমরা নিশ্চিত, দেশবাসী আবার একত্রিত হবে এই দুঃসময়কে ফেলে নতুন সকালের দিকে এগিয়ে যেতে। আমরাই তৈরি করবো ‘সোনায় মোড়া ভারত’, একসাথে, হাতে হাত মিলিয়ে।”
Discover more from SRB News Bangla
Subscribe to get the latest posts sent to your email.