Spread the love

কলকাতা ১৮ এপ্রিল ২০২৩: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতে লিভারের রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে। বিশেষ করে ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ফ্যাটি লিভারের রোগ উদ্বেগের প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। এইভাবে লিভারের রোগ-এর ঘটনা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন আক্রান্ত হচ্ছে লিভারের রোগে। ভারতে এখন বছরে ২৬৮,৫৮০ জনের মৃত্যু ঘটছে লিভার-সম্পর্কিত রজার কারণে (সমস্ত মৃত্যুর ৩.১৭ শতাংশ), যা সমগ্র বিশ্বে ২ মিলিয়ন লিভার-সম্পর্কিত মৃত্যুর ১৮.৩ শতাংশ।

এই বিষয়টি মাথায় রেখে, ওল্ড এয়ারপোর্ট রোড-এর মণিপাল হাসপাতাল সম্প্রতি ভারতের পূর্ব/উত্তর পূর্ব অঞ্চলে লিভারের রোগের উদ্বেগজনক বৃদ্ধির বিষয়ে ১৮ এপ্রিল কলকাতায় একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনে মনিপাল হাসপাতাল ওল্ড এয়ারপোর্ট রোড-এর লিড কনসালটেন্ট – এইচপিবি এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্জারি ডাঃ রাজীব লোচন এবং মনিপাল হাসপাতাল ওল্ড এয়ারপোর্ট রোড-এর এইচওডি ও কনসালট্যান্ট – মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ডাঃ রাজ ভিগ্না ভেনুগোপাল উপস্থিত ছিলেন৷

ভারতে, হেপাটাইটিস বি এবং সি সংক্রমণ সহ ভাইরাল হেপাটাইটিসের উচ্চ প্রকোপ লিভারের ক্ষতি এবং লিভারের রোগের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ হিসাবে মনে করা হয়। লিভারের ক্ষতি বৃদ্ধি`র আরেকটি প্রধান কারণ হল, অ্যালকোহল ব্যবহার, যা মানুষকে ফ্যাটি লিভার রোগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই রোগের প্রাদুর্ভাব ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অত্যন্ত বেশি। হেভি অ্যালকোহল সেবনের ফলে অ্যালকোহলযুক্ত লিভার রোগ হয়, অন্যদিকে তামাকের ব্যবহার লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। গ্রামীণ সেটিংগুলি দূষিত খাদ্য, জল এবং ব্লাড প্রোডাক্টের মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে, এমন বেশ কয়েকটি সংক্রমণও নিয়ে আসে – যার সবগুলিই দীর্ঘস্থায়ী লিভারের প্রদাহ এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লিভারের বড় রকমের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।

অগ্ন্যাশয়ের রোগ, যেমন গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, ডুওডেনাল আলসার, প্যানক্রিয়াটাইটিস এবং গল ব্লাডার স্টোন নির্ণয় করা কঠিন, কারণ, এই সমস্ত ক্ষেত্রে অ্যাসিডিটির মত লক্ষণগুলি রোগের বিভিন্ন অবস্থার দেখা দিতে পারে। এই রোগগুলি প্রায়শই অ্যালকোহল সেবন, গল ব্লাডার স্টোন, উপযুক্ত খাবারের অভাব এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপের অভাবের মত পরিবেশগত কারণগুলির কারণে ঘটে থাকে।

ডাঃ রাজ ভিগ্না ভেনুগোপাল বলেন, “পূর্ব/উত্তর পূর্ব ভারতে, অনেক রোগী গল ব্লাডার এবং অগ্ন্যাশয়ের রোগে ভুগে থাকে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে গল ব্লাডার ও বাইল ডাক্ট-এ স্টোন হওয়াটা অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। ট্রপিক্যাল প্যানক্রিয়াটাইটিস, এমন একটি অবস্থা যেখানে প্যানক্রিয়াসে স্টোন তৈরি হয়। এটিও এই অঞ্চলের অত্যন্ত প্রচলিত রোগ এবং এর চিকিৎসার জন্য একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থার প্রয়োজন, যা আমাদের হাসপাতালের টিম প্রদান করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্যানক্রিয়াসের রোগগুলি লিভারের সমস্যার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। লিভার পুষ্টি প্রক্রিয়াকরণে এবং পরিপাকতন্ত্র থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলিকে ফিল্টার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই প্যানক্রিয়াসের রোগ লিভারে সংক্ৰমিত হয়। অতএব, রোগের অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করতে এবং স্টোনের সময়মত চিকিৎসা প্রদানের জন্য অবিরাম লক্ষণযুক্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি করতে ব্যর্থ হলে জন্ডিস এবং সেপসিসের মত গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে।”

সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে, ডাঃ রাজীব লোচন প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং এই রোগের চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা এবং শিক্ষা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি যোগ করেন, “ভারতে লিভার ক্যান্সার, ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ এবং তাই লিভারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের দেহে লিভারটি সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ হওয়ার কারণে, রোগীর লিভার ৬০-৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া পর্যন্ত লিভারের রোগ প্রায়শই অপরিলক্ষিত হয়। অনেক রোগী রোগের প্রায় শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে যান এবং সেইক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। আমরা তাদের প্রায়ই ডায়ালাইসিসে রাখি এবং প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষার তালিকায় থাকি। সেই কারণেই, হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং, সেইসঙ্গে যাদের লিভারের রোগ বা ঝুঁকির কারণগুলির ইতিহাস রয়েছে তাদের জন্য নিয়মিত চেক-আপ অত্যন্ত প্রয়োজন হয়। লিভারের রোগের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা এবং নিয়মিত চেক-আপ করাও গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি কর্ণাটকের বৃহত্তম লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম, মণিপাল লিভার কেয়ার ইউনিট দ্বারা প্রদত্ত লিভারের বিস্তৃত চিকিৎসা পরিষেবাগুলি`র কথাও তুলে ধরেন। এছাড়াও, যোগ করলেন, “৯৪.৫ শতাংশ সাফল্যের হার সহ, আমাদের মণিপাল লিভার কেয়ার ইউনিট গত বছরেই সফলভাবে ৬৪টি লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করেছে। এর মধ্যে লিভিং ডোনারদের থেকে সাত মাস বয়সী শিশু এবং ৭৪ বছর বয়সী রোগীদের দেহে লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের ঘটনাও রয়েছে। আমরাই একমাত্র হাসপাতাল যারা রোবোটিক ডোনার হেপাটেক্টমি করেছে এবং ৭০ টিরও বেশি বড় মাপের লিভারের প্রতিস্থাপন করেছে। ইউনিটটি সর্বাধুনিক রোবোটিক-সহায়ক প্রযুক্তিতে সজ্জিত এবং এখানে হেপাটোলজিস্ট, ইনটেনসিভিস্ট অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট, সার্জন, নার্স এবং টেকনিশিয়ান সহ অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কর্মী বাহিনী রয়েছে।”

সাংবাদিক সম্মেলনের শেষে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরা হয়, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এবং পাশাপাশি মানুষের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে জীবিত অঙ্গদানের অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। লিভারের রোগের জন্য প্রতিস্থাপন একটি অত্যন্ত সফল চিকিৎসা। লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের চাহিদা মেটাতে ব্রেন-ডেড ডোনেশন-এর সংখ্যা অবশ্যই বাড়াতে হবে। সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লিভিং লিভার ডোনেশনের মাধ্যমে তাদের লিভারের একটি অংশ, যাদের প্রয়োজন তাদের দান করার বিষয়টি একটি নিরাপদ বিকল্প। সুস্থ ব্যক্তিদের লিভিং লিভার দানকে একটি নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। যাদের প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে তাদের জীবন রক্ষার জন্য সুস্থ ব্যক্তিদের এই ডোনেশনে এগিয়ে আসা উচিত।